স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট দিলে টাকা দেওয়ার আশ্বাস বিএনপি নেতার!

স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট দিলে নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের পুরস্কার হিসেবে নগদ টাকা দেওয়া হবে বলে নিজ দলের নেতা–কর্মীদের জানিয়েছেন এক বিএনপি নেতা। এ নিয়ে হুলুস্থূল। এরই মধ্যে অডিও ফাঁস হয়েছে। ঘটনাটি বরগুনা–১ আসনের। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা–১ আসনে কাচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফোরকান মিয়া। প্রস্তাবটি মূলত তাঁর। এই প্রস্তাব নিজ দলের নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের সামনে তুলে ধরে প্রতিশ্রুত অর্থ পাইয়ে দেওয়ার কথা জানান আমতলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জালাল উদ্দিন ফকির। এ ঘটনায় বিএনপি নেতা–কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এর মধ্যে এই বক্তব্যের অডিও ফাঁস হলে তাঁকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। দলের বিরুদ্ধে এমন ষড়যন্ত্রকারী জালাল ফকিরের বিরুদ্ধে সংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানান বিএনপির নেতা–কর্মীরা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। তারা এ নির্বাচন বর্জনের দাবিতে আন্দোলন করছে। নেতা–কর্মীদের অভিযোগ, আন্দোলনের শুরু থেকেই আমতলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জালাল উদ্দিন ফকির দায়সারা আন্দোলন করে আসছেন। আন্দোলন জোরদার করতে আহ্বায়ক জালাল ফকির গত বুধবার উপজেলার সকল ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে তাঁর এক আত্মীয়ের বাসায় ডেকে নেন। ওই বৈঠকে জালাল উদ্দিন ফকির নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছ থেকে প্রস্তাব এসেছে—তাঁকে ভোট দিলে তিনি প্রত্যেক ইউনিয়নে খরচ বাবদ এক লাখ টাকা করে দেবেন। এই মুহূর্তে নেতা–কর্মীদের হাতে টাকা–পয়সা নেই। পদধারী ছাত্রদল, যুবদলসহ বিএনপির নেতা–কর্মীরা মাঠে নামতে পারবে না। তবে সাধারণ কর্মী ও সমর্থকরা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে আসবে।’

এমন সময় উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব তুহিন মৃধাকে বলতে শোনা গেছে, ‘এত অল্প টাকার জন্য কেন আন্দোলন–সংগ্রাম ছেড়ে কর্মী–সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে পাঠাবেন।’ এমন প্রশ্নের জবাবে জালাল ফকির বলেন, ‘আমার পেটে ক্ষুধা আছে। আন্দোলন–সংগ্রামে কেউ ৫০ হাজার, এক লাখ টাকা দিতে পারবেন? পারবেন মাত্র ৫ হাজার ১০ হাজার টাকা দিতে।’

ওই অডিওতে আরও বলতে শোনা গেছে, ‘কাফেরদের টাকা খাওয়া জায়েজ আছে। ৭ তারিখ নির্বাচন হলে ফোরকান মিয়া এমপি হবে। তাতে আমাদের অসুবিধা নেই।’ জালাল ফকির আরও বলেন, ‘টাকা দুই ধাপে দিবে—নির্বাচনের মাঝামাঝি সময়ে অর্ধেক, আর নির্বাচনের দিন বাকি অর্ধেক।’ ওই অডিওতে আরও শোনা গেছে, ‘জসিম ও রুস্তম ভাই আপনারা বলেন কী করব?’ প্রায় ১০ মিনিটের ওই অডিও ফাঁস হওয়ার পর বিএনপি নেতা–কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। দলের বিরুদ্ধে এমন ষড়যন্ত্রকারীর বিরুদ্ধে সংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

এ বিষয়ে গুলিশাখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আন্দোলন চাঙা করতে জালাল উদ্দিন ফকির সভা ডেকেছিল। শুধু আন্দোলন জোরদারের কথা হয়েছে।’ তবে অডিওর বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন। আর এ ব্যাপারে আমতলী উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব তুহিন মৃধা বলেন, ‘আন্দোলন জোরদার করতে জালাল উদ্দিন ফকির সভা ডেকেছিল। ওই সভায় তিনি আন্দোলন সংগ্রামের কথা বাদ দিয়ে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা এনে তাঁর পক্ষে কর্মী–সমর্থকদের ভোট দেওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু আমি তাঁর এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে চলে এসেছি।’ এ ব্যাপারে আমতলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জালাল উদ্দিন ফকিরের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত) আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে যাচাই–বাছাই করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Recommended For You

Leave a Reply