বরগুনার উন্নয়নে শম্ভুদার ৭৫০ কোটি টাকার বরাদ্দ ও বঙ্গবন্ধুকন্যার সিদ্ধান্তের বিরোধিতার রাজনীতি

মহামারি করোনা থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে সংক্রমণের একেবারে শুরুর দিকেই জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার সারাদেশকে লকডাউনের আওতায় আনে। ওইসময়ে সারাদেশকে লকডাউনের আওতায় আনার পাশাপাশি ঘরবন্দি মানুষকে খাবারের জোগানও দেয় বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার। চালায় ব্যাপকহারে ত্রাণ কার্যক্রম। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৫০ লাখ মানুষের হাতে নগদ টাকাও পৌঁছে দেয় সরকার। এর পাশাপাশি, অর্থনীতি বাঁচাতে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার নগদ প্রণোদনা ঘোষণা করে। এরপর যখন টিকা আবিষ্কার হয়, শুরুতেই বাংলাদেশের মানুষের জন্য টিকা নিয়ে আসে সরকার। এসব সম্ভব হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বের কারণে। দেশের মানুষকে বাঁচাতে জননেত্রী শেখ হাসিনার এসব কার্যক্রম সারা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়। মরণঘাতী এই ভাইরাসকে মোকাবেলায় সফলতার জন্য ওইসময় তিনি বিশ্বসেরা রাষ্ট্রপ্রধানও নির্বাচিত হন।

কিন্তু এসব কাজ করতে গিয়ে সরকারকে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে অর্থ বরাদ্দ ব্যাপকভাবে কাটছাঁট করতে হয়। জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেশের বৃহত্তর স্বার্থে মেগা প্রকল্পগুলো চলমান রেখে পল্লি উন্নয়ন ও গ্রামীণ অবকাঠামোসহ বেশ কিছু খাতের বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ ব্যাপকহারে কমিয়ে আনে। সরকারের পরিকল্পনা ছিল, মহামারি থেকে আগে দেশকে, দেশের মানুষকে রক্ষা করতে হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনার যে পরিকল্পনায় বাংলাদেশ সরকার শতভাগ সফল হয়। সরকার অত্যন্ত সফলতার সাথে করোনাকে মোকাবেলা করলেও করোনার প্রকোপ পুরোপুরি কমে আসার আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সারা বিশ্বকে পুনরায় টালমাটাল করে দেয়। যার ঢেউ পড়ে আমাদের বাংলাদেশেও। সারাবিশ্বে জ্বালানি তেল ও খাদ্যশস্যের তীব্র সংকট দেখা দেয়। তবে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার দক্ষ হাতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবকেও সামাল দেয়। তাঁর নেতৃত্বে এ সংকটকেও কাটিয়ে ওঠে বাংলাদেশ।

তবে এই দুটো সংকট সমগ্র দেশের গ্রামীণ অবকাঠামো ও পল্লি উন্নয়ন খাতে বড় একটা ক্ষত সৃষ্টি করে যায়। এর কারণ হচ্ছে, পর পর আসা এই বড় দুটো ক্রাইসিস সামাল দিতে গিয়ে দেশের গ্রামীণ অবকাঠামো খাতে ৫ বছরে সরকার তেমন মনোযোগ দিতে পারেনি। এই সময়ে সরকারের মূল মনোযোগ ছিল, দেশের মানুষকে রক্ষা করা এবং ব্যয় সংকোচন নীতির মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে রক্ষা করা।

মূলত এই কারণেই সারা দেশের গ্রামীণ রাস্তাঘাটগুলো মেরামতের অভাবে খানাখন্দে ভরে ওঠে। তবে আমার কথাকে বিশ্বাস না করলে আপনারা গুগলে চেক করে দেখতে পারেন। আরেকটি কথা হচ্ছে, সব বুঝেও কিছু না বোঝা আমাদের যে বিজ্ঞজনরা কথায় কথায় যারা পার্শ্ববর্তী জেলা পটুয়াখালীর উদাহরণ টানেন সে জেলার গ্রামীণ রাস্তাঘাটও এইরকম বেহাল অবস্থাতেই পড়ে ছিল গত কয়েক বছর। কারণ, এই খাতে সরকার বরাদ্দ দিতে পারে নি। তবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বলা হয় ক্রাইসিস ম্যানেজার। বড় বড় দুটো ক্রাইসিস থেকে দেশকে রক্ষা করে এবার তিনি ঠিকই নজর দিলেন গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে। ফলে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন খাতে বিশেষ বরাদ্দ রাখে সরকার।

সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আধুনিক বরগুনার রূপকার অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে বরগুনার গ্রামীণ রাস্তাঘাটের বেহাল চিত্রের কথা তুলে ধরেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও জননেত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সানুগ্রহের ফলে এবারের বাজেটে বরগুনা জেলার প্রায় ৬০০ কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তাঘাট সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ করার জন্য ৭৫০ কোটি টাকার একটি বিশেষ বরাদ্দ পাস করে সরকার। এর ভেতরে বরগুনা সদর, আমতলী ও তালতলী উপজেলার প্রায় ৪০০ কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তা নতুন করে পুনঃনির্মাণ হবে। যে প্রকল্পের কিছু কাজ এখনই শুরু হয়ে গেছে, বাকি কাজও খুব দ্রুত শুরু হবে।

একটা কথা বলি, জননেতা ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সময়েই বরগুনার সমস্ত রাস্তাঘাট পাকা হয়েছে, আবার তাঁর মাধ্যমেই দ্রুতই সমস্ত রাস্তা সংস্কার হবে, পুনরায় নির্মিত হবে। এখানে গুজব-অপপ্রচার সৃষ্টি করার কিছুই নেই। রাস্তা সংস্কার বা পুনঃনির্মাণ করতে যেটা সবচেয়ে জরুরি সেটা হচ্ছে অর্থ। সেই অর্থের সংস্থান আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ইতোমধ্যে করে ফেলেছেন। এখন কেবল কাজ বাস্তবায়ন হওয়ার পালা।

মহামারি করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে দেশকে রক্ষা করতে গিয়ে গ্রামীণ অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ হ্রাস করেছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটা শুধু তিনি বরগুনাতেই করেননি, সমস্ত দেশেই করেছেন। এরকম কয়েকটি খাতের বরাদ্দ হ্রাস করে করে সরকারের যে টাকা সঞ্চয় হয়েছে, সেই টাকাতেই লকডাউনে ঘরে আটকে পড়া মানুষকে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন তিনি, তাদের জন্য টিকা সংগ্রহ করেছেন, প্রণোদনা দিয়ে অর্থনীতিকে রক্ষা করেছেন। আর এভাবেই তো মহামারি থেকে দেশের মানুষকে বাঁচিয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।

অথচ সব জেনে-বুঝেও যখন সেই দলেরই একজন হয়ে বলেন যে, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সময়ে বরগুনার রাস্তাঘাটের কোন উন্নয়ন হয় নি— এই বক্তব্যের মাধ্যমে কি শেখ হাসিনারই বিরোধিতা করলেন না? কারণ, শেখ হাসিনাই তো গত ৩-৪ বছরে এই রাস্তাঘাটের বরাদ্দ কমিয়েই তো করোনায় আপনাকে আমাকে খাবার দিয়ে, টিকা দিয়ে বাঁচিয়েছে। আপনি আওয়ামী লীগও করবেন আবার জননেত্রী শেখ হাসিনার জনবান্ধব সিদ্ধান্তের কৌশলে সমালোচনা করে তাঁর প্রতিনিধিকে কটাক্ষ করবেন, নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করবেন— সেটা তো হতে পারে না। তাহলে কি আপনি পাকিস্তানপন্থি জামায়াতের আদর্শই ধারণ করেন এখনও? বঙ্গবন্ধুকন্যার জনবান্ধব সিদ্ধান্তেও যার গাত্রদাহ হয়। বরগুনার অলিগলিতে কান পাতলে এখনও কিন্তু শোনা যায়, আপনার চৌদ্দগুষ্ঠিতে কারও আওয়ামী লীগ করার রেকর্ড নাই। আপনি বাইচান্স আওয়ামী লীগার!

লেখক: সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগ ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, বরগুনা সদর।

Recommended For You

Leave a Reply