তৃণমুলের আস্থা শম্ভু; ঘর গোছাতে মরিয়া বিএনপি

মো: মিরাজ আহমেদ, নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তৎপর বরগুনা ১ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। রাজনৈতিক সংগঠনগুলোতেও চলছে নানা আলোচনা-পর্যালোচনা। বরগুনা সদর, আমতলী এবং তালতলী উপজেলা নিয়ে গঠিত ১০৯ বরগুনা ১ আসন। আ’লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবেও পরিচিত এই আসনটি। প্রায় সাড়ে চার লাখ ভোটারের এ আসনে বিগত সংসদ নির্বাচনের মধ্যে ৫টিতেই জয় পেয়েছে নৌকা। আর একটিতে জিতেছে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। এর মধ্যে পাঁচবারই জিতেছেন জেলা আ’লীগের সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু।

২টি পৌরসভা এবং ২৪টি ইউনিয়ন নিয়ে বরগুনা-১ আসনে জাতীয় পার্টি দুই এবং বিএনপি একবার জয়লাভ করে। তাই আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও বর্তমান সংসদ সদস্য শম্ভুতেই আস্থা রাখতে চান আওয়ামী লীগের জেলা, উপজেলা ও তৃণমুলের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৯৯৬-২০০১ আমলে খাদ্য উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শম্ভু। নব্বইয়ের পটপরিবর্তনের পর ১৯৯১ সালের ভোটে এমপি হন আ’লীগের জেলা সভাপতি শম্ভু। ’৯৬ সালেও তিনি জয় পান। ২০০১ সালে শম্ভুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মরহুম দেলোয়ার হোসেন। ২০০৮ সালে ১ লাখ ৩১ হাজার ভোট পেয়ে এমপি হন শম্ভু। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনেও বিদ্রোহী মরহুম দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয় ঘরে তুলে নেন শম্ভু। সবশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনেও জয়ের ধারা অব্যহত রাখেন ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভ। তাই এবারেও শম্ভুর হাত ধরেই জয়ের ধারা দেখতে চান নেতা-কর্মীরা।

অপরদিকে আগামী নির্বাচনের আগে ঘর গোছাতে মরিয়া বিএনপি কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে। তবে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুর্ণবহালের দাবীসহ চলমান আন্দোলন নিয়ে দো টানায় রয়েছে দলটি। সে হিসেবে বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে সেজন্য আগেভাগেই ঘর গোছাতে তৎপর নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের দুর্গ দখলে নিতে আগামী নির্বাচনে তরুণ এবং বলিষ্ট নেতৃত্বের প্রার্থীকেই চাইছেন তৃণমুল বিএনপি। সে তালিকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় উপ শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ-উজ জামান মামুন মোল্লার নাম সবার আগে। এছাড়াও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে, সাবেক সংসদ সদস্য মতিয়ার রহমান তালুকদার এবং জেলা বিএনপির আহব্বায়ক মাহবুবুল আলম ফারুখ মোল্লা। সব মিলিয়ে বিএনপি দীর্ঘদিনের নিস্ক্রিয়তার দেয়াল ভেঙে আগামীতে তারা কীভাবে এবং কতটুকু অগ্রসর হতে পারবে এখন সেটিই দেখার বিষয়।

এদিকে বরগুনায় জাতীয় পার্টির নেই কোনো দৃশ্যমান কার্যক্রম। জাতীয় পার্টির বরগুনা জেলা সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য জাফরুল আহসান ফরহাদের মৃত্যুর পর মাঠে নেই নেতাকর্মীরা। বরগুনায় এরশাদ সরকারের আমলে দাপিয়ে বেড়ালেও জাতীয় পার্টির কর্যক্রম চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। দলীয় কোনো কাজ না থাকায় অফিসও খুলছে না কেউ।

অপরদিকে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও সরগরম হয়ে উঠেছেন। পোস্টার, মিছিল মিটিং এবং দলীয় কর্মকান্ডে নানান ভাবে টাইম লাইনে থাকতে চাচ্ছেন তারা। আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য এড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। অব্যহত ধারায় সংসদ সদস্য থাকায় স্থানীয় নেতা কর্মীদের আস্থার জায়গায় রয়েছেন তিনি। দলের ভেতর ঐক্য ধরে রাখতেও তার বিকল্প কেউ নেই বলে মনে করেন নেতা কর্মীরা। দলের ভেতর নানান ধরনের মতভেত এবং ক্ষোভ থাকলেও দলের হাইকমান্ডের নির্দেশ মেনে নেন সবাই। দলের সিনিয়র নেতারাও মনে করছেন, এবারেও দলীয় সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান এমপি শম্ভুকে মনোনয় দেয়, তবে তার পক্ষেই কাজ করবে সবাই। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আরো বেশ কয়েক জন নেতার নামও শোনা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আ.লীগের সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির এবং যুগ্ম সাধারন সম্পাদক গোলাম সারোয়ার টুকু উল্ল্যেখযোগ্য।

বিগত নির্বাচনের মতই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মিশনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের দমন করতে হার্ডলাইনে যেতে পারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এখন সুষ্ঠ ভোট সম্পন্ন করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আবারো ক্ষমতায় যাওয়া আওয়ামী লীগের সামনে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ।

Recommended For You

Leave a Reply