বরগুনা ১ আসন: এই ‘স্বতন্ত্র’ কি সেই স্বতন্ত্র?

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৩ নেতা ভোটের লড়াইয়ে বরগুনা ১ আসনে নৌকা মার্কার মূল প্রতিপক্ষ হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। যদিও বিএনপি অংশ না নেওয়ায় ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন’ দেখাতে দলের এ কৌশল এখন স্থানীয় রাজনীতিতে ‘মাথাব্যাথার’ কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত ২০০১ সালের ‘পাতানো’ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন মরহুম দেলোয়ার হোসেন। সেই নির্বাচনে বরগুনা ১ আসনে ষড়যন্ত্র করে ভোট কারচুপির মাধ্যমে নৌকা প্রতীককে পরাজিত করা হয়েছিল।

পরবর্তীতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বরগুনা ১ আসনে তুমুল জনপ্রিয়তায় দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করেন এড ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। সেই নির্বাচনে পূর্ণরায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে আবারও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন মরহুম দেলোয়ার হোসেন। তুমুল জনপ্রিয়তার কারণে সেই ভোটেও আবারো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। এ নিয়ে টানা তিন মেয়াদসহ মোট পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। তবে এবারের নির্বাচনেও বিগত জাতীয় নির্বাচনের মতই স্বতন্ত্র চক্রান্ত্রের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। নির্বাচন ঘিরে এসব চক্রান্ত সরব রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা শম্ভুবিরোধী প্রচারনা চালাচ্ছিল। এখন নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নানান ধরনের অপপ্রচার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বরগুনার ইতিহাসে স্বতন্ত্র নির্বাচন একটি ঐতিহ্য ধারায় রূপান্তর হয়েছে। যা দলের বেশ কিছু কথিত নেতারাই এই ঐতিহ্য অব্যহত রেখেছেন। এবারের ভোটেও ব্যতয় ঘটেনি। বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু, ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের উপকমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক খলিলুর রহমান এবং আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের সভাপতি গোলাম সরোয়ার ফোরকান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নেতাকর্মীদের অভিযোগ রয়েছে, জাতীয় নির্বাচন এলেই একটি মহল স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে মাঠে নামে। পরবর্তীতে নৌকার মনোনীত প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার পরে দলের বিরুদ্ধে নানান রকম ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে। এবারের ভোটেও সেটাই হয়তো দেখতে চলেছে বরগুনাবাসী।

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ রয়েছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকুর পুরো পরিবার বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের সভাপতি গোলাম সারোয়ার ফোরকান ২০১৯ সালে আমতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েও অনিয়মের অভিযোগে উচ্চ আদলতের রায়ে ২০২২ সালে ক্ষমতাচ্যুত হন। অপর আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. খলিলুর রহমান ইতিপূর্বে বরগুনা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেও বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন।

বরগুনা-১ আসনে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণকারী ১০ জন প্রার্থীর মধ্যে বিভিন্ন দলের মনোনীত প্রার্থী ৬ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ছাড়াও লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী খলিলুর রহমান, নোঙর প্রতীকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট (বিএনএম) মনোনীত প্রার্থী মাসুদ কামাল, সোনালী আঁশ প্রতীকে তৃণমূল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইউনুস সোহাগ, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) মনোনীত প্রার্থী মাহবুবুর রহমান ও ফুলের মালা প্রতীকে তরিকত ফেডারেশন মনোনীত প্রার্থী শাহ আবুল কালাম। এছাড়া এ আসনে ৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী খলিলুর রহমান ‘ট্রাক’ প্রতীক ও ‘কেটলি’ প্রতীকে নির্বাচন করবেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত অপর দুই প্রার্থী গোলাম সরোয়ার টুকু ‘ঈগল’ প্রতীক ও গোলাম সরোয়ার ফোরকান ‘কেচি’ প্রতীকে লড়াই করছেন।

 

জে/ডেস্ক

Recommended For You

Leave a Reply