বরগুনায় একটি বিদ্যালয়ের ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে স্কুলটির প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত শিক্ষিকার নাম হালিমা খাতুন। তিনি বরগুনা সদর উপজেলায় ৮৭ নং আমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
সদর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সাল থেকে সরকার শিক্ষার্থীদের জন্য শতভাগ উপবৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে। কোন শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দিতে হলে তাকে অবশ্যই স্কুলে ভর্তি করতে হবে এবং শতকরা ৮৫ ভাগ ক্লাসে উপস্থিত থাকতে হবে। এসব শর্ত পূরণ হলেও একজন শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দিতে পারবেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
সরেজমিনে গিয়ে ভর্তি তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২১ সালের শিক্ষার্থী ভর্তি খাতায় প্রাক প্রাথমির শ্রেনীর ক্রমিক নং ১, ১ম শ্রেনীর ক্রমিক নং ৯ ও ২য় শ্রেণির ক্রমিক নং ১২ ফাঁকা রেখেছেন প্রধান শিক্ষক।
২০২০ সালের ২য় শ্রেনীর শিক্ষার্থী সিফাত, চতুর্থ শ্রেনীর হাফসা, সীমা অভিভাবক কামরুন নাহার ইসা পিতা সেলিম গাজী, মাতা হামিদা নাম দিয়ে ভর্তি তালিকা দেখিয়ে উপবৃত্তি প্রদান করেন প্রধান শিক্ষক। উপবৃত্তির তালিকায় যে নাম্বারটি দেয়া হয়েছে সেটি অভিভাবক সেলিম গাজী চিনেন না।
এছাড়াও ২০২১ সালের ১ম শ্রেনীর তাসিফের অভিবাবক তানিয়া বলেন, আমার ছেলেকে মাদ্রাসায় পড়াই। তাকে কোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াইনি কখনও।
তাওহিদুল ইসলাম সানির অভিভাবক খাদিজা বলেন, আমার ছেলেকে বরগুনা কলেজ রোডের ক্যালিক্স একাডেমি থেকে ৫ম শ্রেনীতে পড়িয়েছি।
২০২১ সালের ২য় শ্রেনীর মেহেদীর অবিভাবক রুনু, মহিবুল্লাহর অবিভাবক পারভীন ২০২২ সালের ৫ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী সোলায়মান অবিভাবক হাসি বেগম ভর্তি তালিকায় না থাকলেও প্রধান শিক্ষক যোগসাজশ করে তাদেরকে উপবৃত্ত পাইয়ে দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রধান শিক্ষক বলেন, ভর্তি না করে উপবৃত্তি দেয়ার কোন সুযোগ নেই। এখানে প্রধান শিক্ষক নিজে আর্থিক লাভবন হওয়ার জন্যই অসাধু পথ অবলম্বন করেছেন।
এবিষয়ে আমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হালিমা খাতুন মুঠোফোনে বলেন, শিক্ষার্থী ভর্তি হাজিরায় নাম না থাকলে আমরা কাউকে উপবৃত্তি দেইনা। ২০২১ সালের ১ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী তাসিফ ও ২০২২ সালের ৫ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী তাওহিদুল ইসলাম সানির নাম ভর্তি তালিকায় না থাকলেও কিভাবে তাদেরকে উপবৃত্তি দিয়েছেন তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাসিফ নামে আমার কোন শিক্ষার্থী ছিলনা। এবং তাওহিদুল ইসলাম সানি আমার বিদ্যালয় থেকে ২০২২ সালে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
মুঠোফোনে তিনি আরও বলেন, এইমূহুর্তে আমার কাছে ভর্তি খাতা নেই। আমি স্কুলে গিয়ে এবিষয়ে আপনাকে জানাতে পারবো।
এবিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা জেরিনা আক্তার বলেন, একই শিক্ষার্থীকে দুটি প্রতিষ্ঠানে দেখানোর সুযোগ নেই৷ প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া না করলে তাকে উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার কোন বিধান নাই। যদি এরকম কোন লিখিত অভিযোগ পাই তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।