প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের মতো একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল থাকায় আমরা জনগণের সমর্থন, আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এবারের নির্বাচনে সে বাস্তবতার ব্যাপক প্রতিফলন ঘটেছে। সোমবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর দলের কেন্দ্রীয় কার্যনিবাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ ও সহযোগী সংগঠনের যৌথ সভায় এ কথা বলেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের মতো একটি শক্তিশালী সংগঠন আমার সঙ্গে আছে বলেই জনগণের সমর্থন, বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে। কারণ, সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করে। অন্য কারো ওপর তাদের সেই বিশ্বাস ও আস্থা নেই। কাজেই তাদের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটা আমাদের পূরণ করতে হবে।
তিনি বলেন, খেটে খাওয়া মানুষ, গরিব কৃষক, রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে দিনমজুর তাদের ভাগ্য কীভাবে পরিবর্তন করবো, তাদের জীবন-মান কীভাবে উন্নত করবো- সেটা সবসময় মাথায় রাখতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের সেটাই শিখিয়েছেন। আর সেভাবেই আমাদের চলতে হবে। আওয়ামী লীগ একটি বড় দল এবং সংগঠন পাশে না থাকেলে কোনোকিছু অর্জন সম্ভব ছিল না উল্লেখ করে দলীয় সভাপতি বলেন, প্রতিটি সাফল্যের পেছনে একটা শক্তি দরকার। আমার শক্তি বাংলাদেশের জনগণ, আওয়ামী লীগ ও আমাদের সহযোগী সব সংগঠন।
তিনি বলেন, সবার সঙ্গে আমরা নির্বাচন করেছি। কেউ হেরেছে কেউ জিতেছে। কারো কষ্ট আছে, আবার কারো আনন্দ আছে। কিন্তু ঐ আনন্দ, দুঃখ, কষ্ট, হাসি, কান্না সবকিছু মিলিয়ে চলতে হবে। জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে মানুষের জন্য সবাইকে আবার এক হয়ে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। মানুষের যে আস্থা ও বিশ্বাস আমরা অর্জন করেছি সেটা যেন কোনোমতে হারিয়ে না যায়। তিনি আরো বলেন, অগ্নিসন্ত্রাসী গোষ্ঠী যারা ট্রেনে আগুন দিয়ে মা ও শিশুকে পুড়িয়ে মারে, বাসে আগুন দেয়, রেলের ফিসপ্লেট খুলে মানুষ হত্যার ফাঁদ পাতে তাদের বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। তাদের মিথ্যাচার এবং এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। যারা নির্বাচন বানচাল করতে চায় তারা গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায় না, গণতন্ত্র চায় না, নির্বাচন চায় না, তারা দেশের শত্রু, জনগণের শত্রু। জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের কথা বাদ দিয়ে আমাদের দেশের জন্য কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন-বৃত্তান্ত তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ যদি আমাকে ‘৮১ সালে না ডাকত এবং দায়িত্ব না দিত তাহলে আমি আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে বা দেশের উন্নতি করতে পারতাম না। কাজেই এই আওয়ামী লীগ অফিস, এটাই আমার মূল শেকড়। এজন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এক সময়ের আন্দোলন-সংগ্রামের সারথী যারা আজ নেই, তাদেরও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন শেখ হাসিনা। সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বাগত বক্তব্য দেন। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের আগুন-সন্ত্রাসের ইতিহাস উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তাদের সেই ভয়াল চেহারা, তাদের সেই চরিত্র আমরা আবার দেখতে পেলাম গত ২৮ অক্টোবর। পুলিশের উপর হামলা, একজন পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা, রাজারবাগে পুলিশ হাসপাতালে হামলা, অ্যাম্বুলেন্সে অগ্নিসংযোগ, বিচারপতির বাসভবনে হামলা, মহিলা আওয়ামী লীগের মিছিলে হামলা, সাংবাদিকদের উপর হামলা, গাড়ি পোড়ানো, ভাঙচুর- কেউ তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। এ ঘটনা ঘটিয়ে তারা আবার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গিয়ে কাঁদে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামনে রোজা, মানুষের যেন কষ্ট না হয়। এই রমজান মাসে যা যা দরকার তার সবই আমরা আগাম ক্রয় করার চেষ্টা করেছি। পণ্য ক্রয়ে মানুষের যেন কষ্ট না হয় সেজন্য আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের কল্যাণ আওয়ামী লীগের হাতে। কারণ, এই আওয়ামী লীগই এদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। এই আওয়ামী লীগই এদেশের মানুষকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এনে দিয়েছে। শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ দিয়েছে, সাক্ষরতার হার বাড়িয়েছে, চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। বড় কথা হলো সরকার বিনামূল্যে ভূমিহীন-গৃহহীনকে ঘর দিয়ে জীবনমান উন্নত করার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাংলায় একটি মানুষও ভূমিহীন গৃহহীন থাকবে না’, প্রধানমন্ত্রী তার এই অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।