দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা ১ আসনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের নিয়ে জনমত জরিপ করেছে দৈনিক মানবকাল। এসব প্রার্থীদের নিজ এলাকায় রাজনৈতিক অবস্থান, গ্রহনযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে এই জরিপ পরিচালিত হয়েছে। জরিপে মাঠ পর্যায় থেকে জনগণের মতামত নিয়ে প্রার্থীদের প্রকৃত অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। জরিপে মতামত নেওয়া হয়েছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, দিন মজুর, গৃহিনী, চাকুরীজীবী, রিকশাচালক, ছাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের। জরিপে এগিয়ে থাকা ১০ জনের তথ্য উপাত্ত উল্লেখ করা হল। তবে প্রকাশ থাকে যে, উক্ত জরিপ দৈনিক মানবকালের একান্ত নিজস্ব। এখানে কোন ব্যক্তি বা কোন দলকে ছোট করা হয়নি। আমরা সব প্রার্থী এবং সব দলকে শ্রদ্ধা ও স্বাগত জানাই।
দ্বাদশ জাতিয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন আওয়ামী লীগেরই তিন নেতা। অন্য দলের আদিপত্য না থাকায় হেভিওয়েট শম্ভুসহ চার নেতার লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোট হবে বলে আশা করছেন সাধারণ ভোটাররা। বরগুনা জেলা সদর, আমতলী আর তালতলী উপজেলা নিয়ে সংসদের ১০৯ বরগুনা-১ আসন । এখানে প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণকারী ১০ জন প্রার্থীর মধ্যে বিভিন্ন দলের মনোনীত প্রার্থী ৬ জন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী খলিলুর রহমান, সোনালী আঁশ প্রতীকে তৃণমূল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইউনুস সোহাগ, নোঙর প্রতীকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট (বিএনএম) মনোনীত প্রার্থী মাসুদ কামাল, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) মনোনীত প্রার্থী মাহবুবুর রহমান অভি ও ফুলের মালা প্রতীকে তরিকত ফেডারেশন মনোনীত প্রার্থী শাহ আবুল কালাম। এসব প্রার্থীদের মধ্যে জনমত জরিপে এগিয়ে রয়েছেন নৌকা মার্কার প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। প্রায় সাড়ে চার লাখ ভোটারের এ আসনে বিগত সংসদ নির্বাচনের মধ্যে ৫টিতেই জয় পেয়েছে নৌকা। আর একটিতে জিতেছে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। এর মধ্যে পাঁচবারই জিতেছেন জেলা আ’লীগের সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। ২টি পৌরসভা এবং ২৪টি ইউনিয়ন নিয়ে বরগুনা-১ আসনে জাতীয় পার্টি দুই এবং বিএনপি একবার জয়লাভ করে। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও বর্তমান সংসদ সদস্য শম্ভুতেই আস্থা রাখতে চান সাধারণ ভোটার। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৯৯৬-২০০১ আমলে খাদ্য উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শম্ভু। নব্বইয়ের পটপরিবর্তনের পর ১৯৯১ সালের ভোটে এমপি হন আ’লীগের জেলা সভাপতি শম্ভু। ’৯৬ সালেও তিনি জয় পান। ২০০৮ সালে ১ লাখ ৩১ হাজার ভোট পেয়ে এমপি হন শম্ভু। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনেও বিদ্রোহী মরহুম দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয় ঘরে তুলে নেন শম্ভু। সবশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনেও জয়ের ধারা অব্যহত রাখেন ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভ। দৈনিক মানবকালের জরিপের ৩৭ শতাংশ মানুষ মনে করেন শম্ভুকে এমপি নির্বাচিত করলে বরগুনা শান্তি ও শৃঙ্খলার ভেতর থাকে। জরিপে অংশ নেওয়া উত্তরদাতারা বিভিন্ন খাতে শেখ হাসিনার সরকারের সাফল্য তুলে ধরে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। সড়ক, মহাসড়ক এবং সেতু নির্মাণে সরকারের সাফল্যের কথা বলেছেন এসব মতামতকারিরা।
ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের উপকমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক খলিলুর রহমানের ১৪%, বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু ১৬% এবং আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের সভাপতি গোলাম সরোয়ার ফোরকান ১৯% জনসমর্থন রয়েছে। সাধারণ ভোটার মনে করেন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে স্বতন্ত্র প্রার্থী এমপি হলে উন্নয়নের কোন কিছুই বরগুনায় হবে না। এছাড়াও যেমনটা ২০০১ সালের মরহুম দেলোয়ার হোসেন স্বতন্ত্র এমপি হবার কারণে নানান দিক থেকে বরগুনা পিছিয়ে পড়েছিল। যদিও তখন সরকারে ছিল জামায়াত বিএনপি জোট । অপরদিকে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী খলিলুর রহমান ৪%, সোনালী আঁশ প্রতীকে তৃণমূল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইউনুস সোহাগ ৩%, নোঙর প্রতীকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট (বিএনএম) মনোনীত প্রার্থী মাসুদ কামাল ১%, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) মনোনীত প্রার্থী মাহবুবুর রহমান অভি ১% ও ফুলের মালা প্রতীকে তরিকত ফেডারেশন মনোনীত প্রার্থী শাহ আবুল কালাম ২% এবং স্বতন্ত্র মোহাম্মাদ নূরুল ইসলাম কেটলি প্রতীকে জনমত জরিপে ১% জনসমর্থন রয়েছে। ১০০ শতাংশের বাকি ২ শতাংশ কোন প্রার্থী বা দলের পক্ষে মতামত প্রদাণ করেনি।
ভোটাররা বলছেন, দেশের অব্যহত আর্থসামাজিক উন্নয়ন এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে ভোট দিবেন। শুভসন্ধ্যা সমুদ্রসৈকতের সোনালি বালুকাবেলা কিংবা পাথরঘাটার গহীন বনের সবুজ হাতছানি, অপরূপ সৌন্দর্যের আধার এই বরগুনা জেলায় জনগণের জীবনমান উন্নয়নে শম্ভুকে জয়ী করবেন বলেও জানান ভোটাররা। এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৯১৭ জন। পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৫০, নারী ভোটার ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬০ জন এবং হিজড়া ভোটার ৭ জন।