মো: মিরাজ আহমেদ
দীর্ঘ ২০ বছর পর আজ (১৫ জুলাই) অনুষ্ঠিত হচ্ছে বরগুনা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন। দেড় যুগেরও বেশি সময়ের পর অনুষ্ঠিত এ সম্মেলন ঘিরে শহরজুড়ে সাজ সাজ রব। ফেস্টুন, বিলবোর্ড, ব্যানার, দলীয় ও জাতীয় পতাকায় ছেয়ে গেছে শহর। প্রধান প্রধান সড়কে নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ। গোটা শহর জুরেই বিরাজ করছে সর্বত্র উৎসবের আমেজ। সম্মেলন নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে কর্মচাঞ্চল্য। এবার তরুণরা নেতৃত্বে আসবেন, এমনটি বলছেন তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এ জন্য আলোচনায় এগিয়ে তরুণ নেতারা। শহরের ঐতিহ্যবাহী টাউনহল সিরাজউদ্দিন মিলনায়তনে সকাল ১০টায় সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক এ কে এম আফজালুর রহমান বাবু। বিশেষ অতিথি থাকবেন, বরগুনা ১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, বরগুনা ২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাসানুর রহমান রিমন, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি সুলতানা নাদিরাসহ জেলা আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও সম্মেলনে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি দেবাশীষ বিশ্বাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ.কে.এম আজিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবিদ আল হাসান, উপ কৃষি সম্পাদক এম. আফসারুজ্জামান, জাতীয় পরিষদ সদস্য আসাদুজ্জামান রনোসহ জেলা আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতৃবর্গ উপস্থিত থাকবেন। জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক শরীফ ইলিয়াস আহম্মেদ স্বপনের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করবেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্বা কে এম আব্দুর রশিদ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারা হচ্ছে জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের কান্ডারি? নেতা-কর্মীদের মধ্যে এই নিয়ে চলছে জল্পনাকল্পনা। দল কি পুরোনোতেই ভরসা রাখবে, নাকি নতুন মুখে আশার আলো জ্বেলে দেবে? এমন প্রশ্ন সবার মনে। অন্যদিকে এবার নতুন নেতৃত্ব আসবেন, এমনটি বলছেন তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। কারণ বিগত ২০ বছর বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক কার্যক্রম তলানীতে ছিল। নতুন ও উদিয়মান কর্মী তৈরি করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। দলীয় কর্মকান্ডে নিস্ক্রিয় ছিল রশিদ-স্বপন নেতৃত্ব। তাই এবারের সম্মেলনে আলোচনায় এগিয়ে তরুণ নেতারা। যদিও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক নেতাকর্মীর নাম শোনা যাচ্ছে। সভাপতি এবং সাধারন সম্পাদক প্রার্থী হয়েছেন সাবেক ও বর্তমানের প্রায় ১ ডজন ছাত্র ও যুবনেতা। সভাপতি প্রার্থী হিসেবে রয়েছে, সাবেক ছাত্রনেতা বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি হোসাইন মুরাদ, ১/১১ এর শেখ হাসিনা মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও সাবেক ছাত্রনেতা এড. সাইমুল ইসলাম রাব্বি, চৌধুরি মোহাম্মদ ইকবাল, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি সুজন মোল্লাসহ বেশ কয়েকজন তরুণ নেতা। এছাড়াও সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্বা কে এম আব্দুর রশিদ। অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েছেন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান সাধারন সম্পাদক শরীফ ইলিয়াস আহম্মেদ স্বপন, সাবেক ছাত্র নেতা মাহমুদুল ছানাসহ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ও হাইব্রিডের বেশ কয়েকজন ছাত্র নেতা। সম্মেলন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, ‘মাদকাসক্ত ও হাইব্রিড নেতাদের কমিটিতে জায়গা হবে না। ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করে নতুন পুরাতনদের নিয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি হবে।’
এ বিষয়ে সভাপতি পদপ্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি হোসাইন মুরাদ বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে বিরামহীন রাজপথে থেকেছি। ১/১১ এ নেত্রীর মুক্তি আন্দোলনে জীবনের ঝুকি নিয়ে রাজপথে থেকেছি, নেত্রীর মুক্তি আন্দোলন বেগবান করেছি। আমার বিশ্বাস, দায়িত্ব পেলে স্বেচ্ছাসেবক লীগকে মডেল সংগঠন হিসেবে উপহার দিতে পারবো। দলের জন্য ছাত্ররাজনীতি থেকে এ পর্যন্ত কতটুক পরিশ্রম ও ত্যাগ স্বীকার করেছি, সেটা আমার দলীয় নেতা-কর্মীরা জানেন। এবারের সম্মেলনে আশা করছি, নেতারা আমাকেই এই পদের দায়িত্ব দেবেন।’
জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদপ্রার্থী সাইমুল ইসলাম রাব্বি বলেন, ‘১/১১ সময়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা মুক্তি সংগ্রামে সম্মুখ ভাবে রাজপথে থেকে লড়াই সংগ্রাম করেছি। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকাকালিন সময় জামায়াত বিএনপির দু:শাসনের শিকার হয়েও রাজপথে নেতৃত্ব দিয়েছি জোড়ালো ভুমিকায়। বহু আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। দলের কর্মী হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করছি। আমার বাবাও আওয়ামী লীগের সাবেক উপজেলা সভাপতি মরহুম এড. নজরুল ইসলাম আলম, তিনি ত্যাগী এবং নিবেদিত নেতা ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি বাবার আবেগ, জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে বিরামহীন রাজপথে থেকেছি। আমার বিশ্বাস, কেন্দ্র ত্যাগী এবং নিবেদিত কর্মীদেরই মূল্যায়ন করবেন।’
অন্যদিকে জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকলেও কোনো গ্রুপিং নেই। ঐক্যবদ্ধভাবে শক্তিশালী কার্যকরী কমিটি উপহার দিতে চান। কমিটি গঠনে কেন্দ্রীয় নেতারা যে সিদ্ধান্ত দেবে সেই মোতাবেক কমিটি গঠন হবে।
সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির সদস্য ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাগর কর্মকার বলেন, ‘সম্মেলন সফল করতে সকল আয়োজন আগে ভাগেই সম্পন্ন হয়েছে। ২০ বছর পর হতে যাওয়া এ সম্মেলন সফল করতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য এড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু সার্বিক দিক নির্দেশনা ও খোঁজ খবর রেখেছেন। সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। সামনে জাতীয় নির্বাচন, নেতৃত্বে এমন লোক আসা উচিত, যাদের নেতৃত্বে দল নির্বাচনে জয়ী হবে। বিশেষ করে যারা ১/১১ এর সময়ে পরীক্ষিত সৈনিক, যারা বিভিন্ন সময়ে দলের জন্য কাজ করেও অবহেলিত ছিলেন এমন প্রার্থীকেই কেন্দ্র মুল্যায়ন করবেন’।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এবারের সম্মলনের তাৎপর্য ও গুরুত্ব অনেক। একদিকে সামনে চ্যালেঞ্জিং জাতীয় নির্বাচন অন্যদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের রাজপথে কর্মকান্ড প্রতিহত করতে আর্দশ এবং সাহসী নেতৃত্ব বাছাই করতে হবে। ভুল ব্যক্তির হাতে নেতৃত্ব গেলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের অবস্থান কর্মীশূণ্য হবে। প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি করা হয়। ওই কমিটি দিয়ে চলছিল নিস্ক্রিয় কার্যক্রম।